বৃহস্পতিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১২

“এক সন্ধ্যায়” Part 03


তূর্ণ আর রিনঝিন এর এসব সপ্নের ঘোরেই একমাস চলে যায়, রিনঝিন খুবভালো মতো বুঝেছে যে তূর্ণকে ছাড়া সে থাকতে পারবে না। মা না হয়েও ওর শুধু মনে হয় তূর্ণকে যেন ওই জন্ম দিয়েছে। আর তূর্ণও সারারাত ঘুমাতে পারেনা, ওর খুব ইচ্ছ
ে করে রিনঝিনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে। মায়ের কোন স্মৃতিই ওর কাছে না থাকায় চোখ বন্ধ করলেই ও দেখতে পায় রিনঝিন ওকে দুহাত বাড়িয়ে ডাকছে।
কদিন ধরেই তূর্ণ বাবার কাছে জেদ করছে রিনঝিন মিস কে ওদের বাসায় নিয়ে আসতে। লুব্ধর অনেক বোঝানোরপরেও যখন ও কিছুতেই বুঝতে চায়নি লুব্ধ ওকে অনেক বকেছে। সেই থেকে তূর্ণ আবারও চুপ হয়ে গেছে। এর মাঝে একদিন ও সপ্নে দেখলো রিনঝিন বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে চলে যাচ্ছে, তূর্ণ বারবার মা মা বলে ডাকছে কিন্তু রিনঝিন ফিরে আসছে না, চলেই যাচ্ছে। এই সপ্ন দেখার পরই তূর্ণর ভীষণ জ্বর এলো।
লুব্ধ ওকে সকালে ডাকতে এসে ভাবলো এখনও ঘুমাচ্ছে ঘুমাক, স্কুল বন্ধ বলে আর না ডেকে অফিস এ চলে গেলো লুব্ধ। রিনঝিন দুপুরের একটু আগেইএ বাসায় চলে এলো রান্না করে তূর্ণকে খাওয়াবে বলে। কিন্তু স্তব্ধ রিনঝিন তূর্ণর জ্বরে পুরেযাওয়া শরীরটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসে রইলো। ও কতক্ষন ওভাবে বসেছিল তাও বলতে পারেনা, শুধু তূর্ণ যখন বলছিলো- মা... আমাকে ছেড়ে যেওনা, আমাকে সাথে নিয়ে যাও, স্কুল এ সবার মা আছে...তখন রিনঝিন আর সহ্য করতে না পেরে পাগলের মতো কাঁদতে লাগলো।
বিধাতা উপরে বসে এই কাহিনীর কি সমাপ্তি লিখছিলেন জানিনা, কিন্তুআশ্চর্যজনক ভাবে লুব্ধ বাসায় ফিরে এই দৃশ্য দেখে ফেললো।
লুব্ধকে দেখে রিনঝিন কান্না থামিয়ে ওর দিকে তাকালো। রিনঝিন এর চোখের দিকে তাকিয়ে লুব্ধ ভয় পেয়ে গেলো। ওর চোখের মধ্যে একটা ভয়ংকর আকুতি ছিলো যা ফিরিয়ে দেয়া হয়ত স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার কাছেও অসম্ভব, তাই লুব্ধ চোখ সরিয়ে তাড়াতাড়ি ওখান থেকে চলেগেলো।
সন্ধ্যায় তূর্ণর জ্বর একটু কমে আসায় রিনঝিন লুব্ধর ঘরে গেলো।
- লুব্ধ আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
- হ্যাঁ বলুন।
- আমি এ বাড়ি থেকে যেতে চাইনা।
- মানে কি?
- মানে আপনি ভালো করেই বুঝতে পারছেন লুব্ধ।
- না আমি পারছি না।
- আমি তূর্ণর মা হয়ে এ বাড়িতে থাকতে চাই।
- রিনঝিন, আমি তৃণার জায়গা কখনই কাউকে দিতে পারব না। দুদিনের আবেগে ভুল করে বসবেন না।
- আমি আপনার জীবনে তৃণার জায়গা নিতে চাইছি না, আমি শুধু তূর্ণর মা হতে চাইছি। তবে মিথ্যে বলবো নাআপনাকে, গত একটা মাসে রাতের পর রাত আমি ইচ্ছে করে জেগে থেকেছি আপনাকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে বলে, দুপুরে অনেক যত্নে রেধেছি তূর্ণর সাথে সাথে আপনারও তৃপ্তি করে খাওয়া মুখটা দেখব বলে। এর নাম যদি ভালবাসা হয় তবে হ্যাঁ আমি আপনাকে ভালবাসি। কিন্তু দেখুন না, পৃথিবীটা কত নিষ্ঠুর, ২৫টা বছর ধরে তিলতিল করে নিজের ভালবাসাগুলোকে জমিয়ে রেখেছিলামকোন এক সপ্নমানবকে উজার করে দেব বলে, অথচ আমার সপ্নমানব এমন এক বাস্তবরূপে আমার সামনে এলো যার খুব কাছে থেকেও হাত বাড়ালেও তাকে ছুয়ে দেয়া যায়না।
- লুব্ধ কি বলবে ভেবে পায়না। রিনঝিনের জন্য ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কেন হচ্ছে সেটা ও বুঝতে পারছে না, শুধু গলার কাছে কি যেন দলা পেকে উঠে আসতে চাচ্ছে।এরকম ভয়ংকর কষ্ট তো ওর আগে কখনও হয়নি? রিনঝিনের কাজলে লেপটে যাওয়া চোখদুটো কি ওকে তৃণার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে? কেন ওর মনে হচ্ছে যেন রিনঝিন নয় তৃণা ওকে ডাকছে।
- লুব্ধ আমি চলে যাচ্ছি। রিনঝিন উলটো ঘুরে ফিরে আসতে লাগলো, ওর ভীষণ কান্না পাচ্ছে, লুব্ধ যদি একবার ওকে ডাকতো......।।
না রিনঝিন একা কাঁদছে না, ওকে সঙ্গ দিতেই বুঝি বৃষ্টি শুরু হলো। রিনঝিন ঘর থেকে বেড়িয়ে আঙিনায় দাঁড়িয়ে ভিজতে লাগলো... ওর পা যেন গেট এর কাছে যেতে চাইছে না, হাটু ভেঙে বসে পড়লো ও মাটিতে।
- রিনঝিন ঘর থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সাথেই লুব্ধ বুঝে ফেললো ওর কেন এত কষ্ট হচ্ছে। রিনঝিন এর চোখদুটো একবার ছুয়ে দিতে না পারলে, ওর হাতটা একবার ধরতে না পারলে এই কষ্টটা কমবে না। লুব্ধ ছুটে গেলো রিনঝিনকে আটকাতে, বৃষ্টির মধ্যে বসে কান্নারত রিনঝিনের সামনে গিয়ে বসলো লুব্ধ, কিন্তু একরাশ আড়ষ্টতা ওকে ঘিরে রাখায় ও কিছুই বলতে পারলো না। রিনঝিন লুব্ধকে এভাবে দেখে আচমকা ওকে জড়িয়ে ধরলো। লুব্ধর আড়ষ্টতাগুলোও যেন রিনঝিনের ছোঁয়ায় পালিয়ে গেলো।
আর তূর্ণ তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে চশমা নাকের ওপরে ঠেলে দিয়ে বিজ্ঞের মতো বলে উঠলো- বাবা, মা তোমরা বৃষ্টিতে ভিজছো কেনো? বাংলা মিস বলেছে রাতের বেলা বৃষ্টিতে ভিজতে হয়না, তাহলে জ্বর আসে।
তূর্ণর কথা শুনে লুব্ধ রিনঝিন দুজনই হেসে ফেললো......।।

LIKE+SHARE+TAG+COMMENT
for next story

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন