রবিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১২

===এত কষ্ট কেন ভালোবাসা===

প্রতি দিন দুজন দুজন কে এক নজর না দেখলে মনে হয় মরে যাবে । এভাবে কেটে যায় ওদের সুখের দিন গুলো। কেটে যায় ছয়টি মাস। একে আসে অন্যনের আর কাছা কাছি । দু হৃদয় মিসে যায় এক হয়ে দুজনাতে ! দুজনে 
ই অপেক্ষায় থাকে কখন সকাল হবে , কখন দেখা হবে।রাত যেন আর কাটে না ! গভীর রাত পর্যন্ত চলে ফেসবুকে আড্ডা । ‘রাত্রি কোথায় তুমি?
’ শ্রাবণ মুঠোফোনে বলে ।
‘কেন’? ‘কেন আবার!’ ‘না,বল না’ ‘চলে এসো, বলবো’।
‘হুম’,আসব না’ ‘হায় জান তাহলে মরে যাব ‘।
‘তাহলে বল’ ‘ওকে,’আশূলীয়া যাব, আসো প্লীজ’।
‘ওকে আসছি’।
”প্লীজ জলদি এসো’ ‘একটু অপেক্ষা কর, আসছি আমি’ ।
‘জলদি’ ‘ওকে বাবা ‘ ‘ I LOVE YOU RATRI’. ‘হুম, I LOVE 2! ফোন রেখে দেয় রাত্রি।শ্রাবণের মনে হল কী যেন হারিয়ে ফেলেছে ও ! অপেক্ষা বড় কষ্টের ।
সময় যেন কাটে না।’ ঊফ কখন অ আসবে’ ।
পকেট থেকে মূঠফোণ টা বেড় করল। রাত্রি কে আবার কল করবে ঠীক তখনই দেখল রাত্রি রিকশা থেকে নামছে।
‘এত দেরী ‘! ‘কী করবো বাবা বাসায়,মা এক গাদা মিথ্যে বলে বেড় হতে হল’।
‘তাই, আমার জন্য মিথ্যে ও বলতে পার’!
হাসছে শ্রাবণ। ‘হুম, তোমার জন্য আমি শোব করতে পারি’। ‘তাই’। ‘হুম’। একটা সিএনজি ডেকে উঠে পরে ওরা আসুলিয়ার উদ্দেশে। * * * * * * * * * * * * * ছোট একটা নৌকা পানিতে ভাসছে। তাতে পাসাপাসি বসে আছে ওরা। নিসচুপ চারিদিক। ‘রাত্রি’ । নিরাবতা ভাঙ্গে শ্রাবণ। ‘বল’। ‘তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি’ ‘কি কথা’? ‘আমি আসলে অসুস্থ নই’। ‘জানি আমি’। ‘তুমি জান!’ । অবাক হয় শ্রাবণ। ‘হা, নিলা আমাকে বলেছে।’ ‘তারপর ও তুমি…’ ‘হা, জানতাম তোমাকে কখন ও এড়িয়ে থাকতে পারব না, এক দিন আমাকে ঠিক ই ধরা দিতে হবে!’ ‘তাই!’ ‘হুম’। ‘তুমি খুব ভাল রাত্রি’। ‘তাই’। ‘হুম’। ‘চল তিরে গিয়ে চটপটি খাবো ‘ । ‘চল’। ‘মাঝি তিরে নৌকা বিরাও ।’ ভারা চুকিয়ে রাস্তার পাশে চটপটি’র দোকানে সামনে আসে দাড়ায় ওরা।’ দুই প্লেট চটপটি’। দোকানদার কে বলে ও। ‘তোমার খুব প্রিয় চটপটি’। ‘হুম’। চটপটির প্লেট শেষেতকরে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে শ্রাবণ। দেখে রাত্রি রেগে যায় । ‘এই এক দম খাবে না আজ’ ‘সুদু একটা’। ‘ও দিন না বললে আর খাবে না।’ ‘আজ ই লাস্ট’। ‘হুম’। ‘শিট! প্যাকেটে একটাও সিগারেত নেই’। ‘খুব ভাল হয়েছে’। ‘তুমি একটু দাড়াও আমি এক প্যাকেট সিগারেত রাস্তার অপার থেকে নিয়ে আসি ‘। বলেই দৌড় দেয় শ্রাবণ। ‘এই না!’ শ্রাবণ রাস্তার এক পাস পেরিয়ে অন্য পাশে চলে আসে । রাত্রি ‘র বারন সুনে না । ২য় রাস্তায় আস্তেই একটা ট্র্যাক এসে সজোরে ধাক্কা দেয় ওকে। রাস্তায় ছিটকে পড়ে শ্রাবণ । সোজা ওর মাথা বরাবর ট্র্যাক টার চাকা চলে যায় । মনে হল যেন মাথার খুলি নারকেলের মত ফাটল। ফিকনি দিয়ে রক্ত রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল। শ্রাবণ কাটা মুরগির মত লাফাতে থাকে । চালক বুজতে পেরে দ্রুত কেটে পড়ে। ওপারে সিনেমার মত চেয়ে থেকে চিৎকার দিয়ে ওঠে।’ না’। ‘না শ্রাবণ…। বলে এগিয়ে যায় ওর কাছে । কোলে তুলে নেয় ওর মাথা। রক্তে ভিজে যায় রাত্রি’। ‘রা-ত্রি ‘! বলে নিসঃশব্দ হয়ে যায় শ্রাবণ। ‘ না শ্রাবণ তুমি চলে যেতে পার না!’ রাত্রি’র দুচোখ বেয়ে নেমে আসছে কান্না। ‘কে কোথায় আছো এ্যাম্বুলেন্স ঢাক আমার শ্রাবণ কে বাঁচাতে হবে……’ আকাশে অনেক মেঘ করেছে। টিপ টিপ করে নেমে আসছে ফোটায় ফোটায় । শ্রাবণের রক্ত আর বৃষ্টির পানিতে একাকার হয়ে যায়। রাত্রি দেখতে পায় দূরে একটা এ্যাম্বুলেন্স এগিয়ে আসছে………। *************************** আজ চল্লিশ দিন হল শ্রাবণ চলে গেছে রাত্রি’র জীবন থেকে না ফেরার দেশে। শ্রাবণদের বাড়িতে সবাই জড় হয়েছে । শ্রাবণদের বন্ধুদের কাছে মনে হচ্ছে শ্রাবণ হয়ত কোথায় ও গেছে, ফিরে আসবে সময় হলে। কিন্তু যে চলে যায় সে কি আর ফিরে আসে? কখনও কি কেউ ফিরে এসেছে? রাত্রি’র কাছে বিশ্বাসই হয় না শ্রাবণ নেই। শ্রাবণ ওকে বড় একা করে গেছে। সারা দিন ই ও আনমনা থাকে। কোন কিছুতেই আর আগের মত মন বসাতে পারে না। রাতে গুমটে পারে না। ‘শ্রাবণ যেও না’ বলে চিৎকার করে উঠে। এভাবে চলে যায় দিন ,সাপ্তা, মাস , বছর। সবই ভুলে যায় শ্রাবণ নামে কেউ ছিল এক সময়। ঠিক হয়ে আসে সব।সুদু ঠিক হতে পারেনি রাত্রি। মনে হয় কখনও পারবে না। শ্রাবণকে ও ভুলতে পারছে না। ’শ্রাবণ কেন আমাকে একা করে চলে গেলে’ ‘আমি কি নিয়ে বাঁচব’। তুমি ছারা বেছে কি হবে’। আজ পহেলা ফাগুন। চারদিক বসন্তের হাওয়া। বনে বনে ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে।বেস্ত শহর ঢাকা সেজেছে হলুদে। গাদা ফুল সবার খুপায় শোবা পাচ্ছে। গাদা ফুল আর ফাল্গুন যেন এক হয়ে গেছে। পহেলা ফাগুনে ওরা এসেছিল কাছা কাছি। দুজন হয়েছিল দুজনার । ফাগুন ওদের জন্য নিয়ে এসেছিল ভালবাসা। ফাগুন মানেই প্রেম, ফাগুন মানেই ভালবাসা! ফাগুন মানেই আগুন, ফাগুন মানেই পুড়ে খাঁটি! ফাগুন তোমাকে নিমন্তন। ভালবাসা নিয়ে এসো তুমি সব হৃদয়ে! আজ অনেক দিন পর সাজতে বসল রাত্রি। অনেকক্ষণ ধরে সময় নিয়ে সাজল ও। শ্রাবণের সেই প্রিয় নিল শাড়ি নিল টিপ। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল আয়নায়। যদি শ্রাবণ বলে ওকে আজ ভাল লাগছে না, তখন কি হবে? এ সাজ ত সুদু শ্রাবণের জন্য! বাসা থেকে বেরিয়ে একটা রিক্সা ঢেকে উঠে বসে ও। রিক্সা চলছে। চারদিক দেখতে দেখতে যাছছে ও। উৎসবের নগর মনে হচ্ছে ঢাকা কে। অনেকেই যাছছে জোড়ায় জোড়ায় । তাদের দিকে দেখে ওর ডান দিকে চোখ বুলাল। জায়গাটা খালি! শ্রাবণ নেই ওখানে।ওর বুকের মাজে হু হু করে উঠে। রিক্সা রমনা পার্কার সামনে এসে থামে। ভারা চুকিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে ও। রমনা আছে সেই আগের মত! সেই কিস্নচুরা গাছ টায় ফাগুনের আগুন লেগেছে সেই আগের মত। আজও মেলা বসেছে ।একে একে সব দোকান গুরে দেখে ও। একটা ঝিনুকের দোকানে এসে দাড়ায় ও। আজ থেকে এক বছর আগে শ্রাবণ ওকে কিনে দিয়ে ছিল ঝিনুকের মালা। আজও মালাতা পড়ে এসেছে ও। হাত দিয়ে ছুয়ে দেখে । এখনও শ্রাবণের ছোঁয়া পায় ও। শ্রাবণ মিসে আছে ওর সর্ব অনুভূতিতে। আস্তে আস্তে হেটে হেটে সেই জাউ গাছ টার কাছে চলে আসে ও। গাছের ছায়ায় বসে পড়ে। যেন শ্রাবণের ছায়ায় আছে ও! আনমনা হয়ে যায় ও। দূরে একজন যুবক সিগারেট দড়িয়ে মনের সুখে টানছে। হঠাৎ সে দিকে নজর যায় রাত্রি’র। উঠে দৌড়ে সে দিকে এগিয়ে যায়। যুবকের কাছে এসে এক তানে সিগারেট নিয়ে নেয় ।” না তুমি সিগারেট খাবে না! বলে উম্মাদের মত চিৎকার করে উঠে। যুবক কিছু বুজে উথছে পারছে না এ মেয়ে কেন এমন করছে। অবাক হয়ে সুদু তাকিয়ে র্য সে।”পাগল নয়ত”? বলে যুবক। **************************** এক গোছা রজনিগন্দার ফুল হাতে রাত্রি। এগিয়ে যায় শ্রাবণের কবরের দিকে । ফুন গুল শ্রাবণের মাথার কাছে নামিয়ে রাখে ও। ”ফিস ফিস করে বলে শ্রাবণ কেমন আছো?’ ‘ তুমি দেখে যাও আমি ভাল নেই’। ”তুমি ছাড়া আমি কি ভাবে ভাল থাকি!” শ্রাবণের কবরে মাথা রাখে ও। জড়িয়ে ধরে ।’তুমি কেন আমাকে একা ফেলে চলে এলে”! ”আমি এখন কি নিয়ে বাঁচব”। ”তুমি ছাড়া আমি বেছে থাকতে চাই না শ্রাবণ।” ‘বল আমি এখন কি করব”? রাত্রি কে ছুঁয়ে এক রাশ বাতাস চলে যায়। যেন বলছে বাতাস ”প্রিয়া আমি আছি তোমার নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে”! মেঘে আকাশ ছেয়ে গেছে। টিপ টিপ করে নেমে আসে ধরণির বুকে। বৃষ্টিতে একাকার হয়ে যায় রাত্রি। ভালবাসার কষ্টে ভেসে যায় সব। রাত্রির বুক চিইরে বেরিয়ে আসে ” এত কষ্ট কেন ভালবাসায়” —


http://www.facebook.com/nipun202?ref=hl

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন