বৃহস্পতিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১২

“এক সন্ধ্যায়” Part 02

তূর্ণ অনেক ভেবে ঠিক করেছে তূর্ণা নামের পাঁজি মেয়েটার সাথে সে কিছুতেই কথা বলবে না, এটাই ওর শাস্তি। কিন্তু স্কুল এ আসার পর থেকেই তূর্ণা আবার ওর পিছু লেগেছে। এত সিট থাকতে ওর পাশেরটাতেই বসতে হবে?
- অ্যাই তূর্ণ... দ্
যাখ আমি তোর জন্য কি নিয়ে এসেছি, তোর প্রিয় আলুর পরোটা।
- তূর্ণ ঠোঁট কামড়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটা তো আচ্ছা দুষ্টু।
ক্লাস এ মিস চলে আসায় তূর্ণ যেন হাফ ছেড়ে বাচলো। কিন্তু ও কি জানত ক্লাস শেষে কি অপেক্ষা করছে ওর জন্য?
তূর্ণা একটা লাল গোলাপ ওর দিকে বাড়িয়ে বললো – তূর্ণ আমি তোকে ভালবাসি, হি হি হি...... ক্লাস এর সবার হাসি দেখে তূর্ণ রাগে ছুটে গেলো বাংলা মিস এর কাছে।
- বাংলা মিস সব শুনে অনেক কষ্টে হাসি চেপে তূর্ণ কে বললো- এটা তো তূর্ণা একদম ঠিক করেনি, সবার সামনে এভাবে বলা ঠিক না, কোথায় তূর্ণা?
- তূর্ণা কে মিস ডেকেছে শুনে ওর মনটাই খারাপ হয়ে গেলো, সে ভাবল আজ নির্ঘাত বকুনি খেতে হবে। তূর্ণ টা যে এত বোকা কেন ও ভেবে পায়না। ভয়ে ভয়ে মিসের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মিস ওকে কাছে ডেকে বললেন-
- শুনলাম তূর্ণা নাকি তূর্ণ কে ভালবাসে?
- তূর্ণা সজোরে উপর নিচে মাথা ঝাকালো।
- হুম... কিন্তু ভালবাসতে হলে তো বড় হতে হবে, অনেক ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে। তার আগে কাউকে এসব কথা বলা যাবে না, ঠিক আছে?
- তূর্ণা আবার মাথা ঝাকায়।
স্কুল এর পিওন কামরুল দরজায় এসে দাড়ায়- আপা তূর্ণর বাবা আসছে, ওকে ডাকে।
- ঠিক আছে তুমি ওনাকে এখানে নিয়ে এসো।
লুব্ধ দুইমাসব্যাপী একটা প্রোজেক্ট এর কাজ হাতে নিয়েছে, তূর্ণকে একদম সময় দিতে পারবেনা, তাই ও চাইছিলো স্কুল এর কোন টিচারযদি ওকে এই দু’মাস পড়াতো তাহলে ওর চিন্তাটা একটু কমতো, এজন্যই স্কুল এ আসা।
- ও আপনিই তাহলে তূর্ণর বাংলা মিস? আমার ছেলে সবসময় আপনার কথার উদাহরন দেয়।
- জি- আমি রিনঝিন।
- আপনি বাংলা মিস না হয়ে নাচের মিস হলে আপনার নামের সাথে বেশ মানাতো।
- রিনঝিন লুব্ধ দুজনই হাসে।
অবশেষে ঠিক হলো তূর্ণকে এই দু’মাসওর প্রিয় বাংলা মিস পড়াতে আসবে। তূর্ণ তো মনে মনে ভীষণ খুশি।
রিনঝিন আর তূর্ণ মাত্র কদিনেই একজন আরেকজনের খুব কাছে চলে এসেছে। তূর্ণ সারাদিন অপেক্ষায় থাকে কখন বাংলা মিস আসবে বাসায়, মাঝে মাঝে রিনঝিন স্কুল শেষে তূর্ণকে বাসায় দিয়ে আসে, তূর্ণ একদিন রিনঝিনকে বললো- জানো মিস, বাবাটা না একদম পঁচা রান্না করে। আমার একটুও খেতে ইচ্ছে করেনা। রিনঝিন এইকথা শোনার পর প্রায়ই স্কুল শেষে হোস্টেল এ না ফিরে তূর্ণর সাথে বাসায় চলে আসে, কোমরে শাড়ি পেঁচিয়ে রান্না করে, তূর্ণকে খাইয়ে দেয়। তূর্ণর শুধু মনে হয় ও ওর মাকে পেয়েছে। মা থাকলে নিশ্চয়ই এমনিকরে ওকে আদর করতো। ও প্রায়ই আবদার করে বসে, মিস সন্ধ্যা হলেই চলে যেতে পারবে না, কেন মিস এই বাসায় থাকতে পারেনা।
- এ কথা শুধু লুব্ধ আর রিনঝিন কে বিব্রতই করে। তবে তূর্ণর এসব কথা শুনতে শুনতে রিনঝিন এর মনের ভেতর নিষিদ্ধ একটা সপ্নের আনাগোনা শুরু হয়েছে, লুব্ধর দিকে তাকালে কেন জানি লজ্জা করে ওর। অজানা এক ভাললাগা সবসময় ওর মনটাকে ওই বাসায় টানে শুধু।
Next ParT

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন