শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১২

< ♥♥এক পরশ ভালবাসা♥♥

===============
চামেলি ফুফু কানাডা প্রবাসী । ছোট বেলা থেকেই তার নাম শুনে আসছি । সুন্দরী , স্মাট‌,সাহসী, ভদ্র । আরো অনেক বিশেষণ । কিন্তু কখনও আমার সাথে কথা বা দেখা হয়নি । আমাদের পারিবারিক এলবামে তারএকটি সাদা-কালো ছবি আছে ।
হাস্যোজ্জ্বল- প্রাণবন্ত । ফেইসবুকে ছবি দেখেই আমি চামেলী ফুফুকে চিনতে পারলাম । এড ফ্রেন্ড এ ক্লিক করলাম এবং একটা ম্যাসেজ পাঠালাম ।... ফুফু , আমি তোমার চাচাত ভাই
 মাষ্টারের ছেলে , সাগর । ... ফুফু আমার ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্টএকসেপ্ট করল এবং লিখল-সাগর , আমি তোমাকে খুব ভালো করে জানি। লেখাপড়ায় তুমি খুব ভালো করেছো এবং এও জানি –তুমি এখন খুব একটা ভালো জব করছো ।.... এরপর কয়েক মাস ফুফু’র সাথে আমার তেমন যোগাযোগ ছিল না ।একদিন মেইলবক্স খুলতেই দেখলাম চামেলি ফুফুর চিঠি ।....সাগর, তোমার কাছে আমি কিছু টাকা পাঠালাম । নীচের দেয়া ঠিকানায় ছালেহা বেগম নামের এক বয়স্ক ভদ্র মহিলা থাকেন । তুমি টাকাগুলো তাঁকে পৌঁছে দেবে । চামেলি ফুপু এভাবে দু’মাস পরপর আমার কাছে টাকা পাঠাতেন আর আমি সে ভদ্র মহিলাকে দিয়ে আসতাম । একদিন কৌতুহলবশত ফুফুর কাছে জানতে চাইলাম, যে মহিলার কাছে তুমি নিয়মিত টাকা পাঠাচ্ছ; তিনি কে ? কেন পাঠাচ্ছ ? এরপর প্রায় চারমাস ফুফু আর আমার সাথে যোগাযোগ করেনি । মনটা খারাপ হল । কেন শুধু কৌতুহল বশত ঐ মহিলার কথাফুফুকে জিজ্ঞাসা করতে গেলাম !চারমাস পর ফুফুর একটা ম্যাসেজ পেলাম । অনেক লম্বা –চওড়া । আমি পড়তে শুরু করলাম ।
....মামুন আমাদের পাড়ার ছেলে । কলেজ থেকে আসার পথে একদিন আমাকে একা পেয়ে মামুন বিনয়ের সাথে বলল, চামেলি , তোমাকে আমিঅনেকদিন থেকে দেখে আসছি । তোমাকে ভীষণ পছন্দ করি আমি । ঠিক ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিনা ! আমি ছয় বছর আগে আই, এস, সি পাশ করেছি । বাবা মারা যাবার পর আর পড়ালেখা করিনি ।আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা , আমার কথা গুলো তুমি কিভাবে নিচ্ছ ।.........
মামুনকে আমি ভালমত চিনতাম না । পাড়ার ছেলে বলে দু’এক বার দেখেছি মাত্র । রাগে ক্ষোভে আমার গাল - কান লাল হয়ে গেল । মামুনের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললাম,আপনার সাহস দেখে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে। আপনি আর কোনদিন আমার সামনে আসবেন না ।
বছর দু’য়েক পর কানাডা প্রবাসীতোমার এই ফুফার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেল । এরমধ্যে
২.
মামুনকে আর কখনও দেখেছি বলে আমি মনে করতে পারছিনা কিংবা দেখলেও মামুনের চেহারা আমি ভুলে গেছি । বিয়ের ছয় মাস পর আমি কানাডায় পাড়ি জমালাম। তখন আমার হাজবেন্ড একটি মাল্টি ফুড ষ্টোরে চাকুরী করত । কিছুদিন পর চাকুরী ছেড়েসে নিজেই ব্যবসা বাণিজ্যের চেষ্টা করে । বিয়ের পর গত বিশ বছরে সে পাঁচ- পাঁচটি মাল্টি ফুড ষ্টোরের মালিক হয়েছে । শুরু থেকেই আমাদের ষ্টোরগুলোদেখাশোনা করছিল বিশ্বস্ত কম’চারী জলিল মিয়া । জলিল মিয়া গত প্রায় বিশ বছর ধরে আমাদের সাথে । থাকত আমাদের বেইজমেন্টের একটি কামরায় । খাওয়া-দাওয়া আমাদের সাথে । জলিল মিয়ার গালভতি` দাঁড়ি । রোগা প্রকৃতির । চেইন স্মোকার । কিন্তু মনিব ভক্ত কাজ পাগল মানুষ ।সত্যি বলতে কি তার অক্লান্ত পরিশ্রমেই আজ আমরা এত বিত্তশালী ।
বছর খানেক আগের কথা । আমার হাজবেন্ড জরুরী কাজে বাংলাদেশ গেছে । এর পরদিনই জলিল মিয়া হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ল ।আমি জলিল মিয়াকে হাসপাতালে ভতি করিয়ে নিজেই ষ্টোর গুলোর দেখাশোনা করতে লাগলাম । দু’দিন পর আবার হাসপাতাল থেকে জরুরী ফোন এল ।জলিল মিয়ার অবস্থা ভীষণ খারাপ । আমি হাসপাতালে ছুটে গেলাম । জলিল মিয়া ততক্ষণে মারা গেছে ।
জলিল মিয়ার পকেটে একটি সংক্ষিপ্ত চিঠি পেলাম –প্রিয়চামেলী , আমার নাম জলিল মিয়া নয় । আমি পাড়ার সে-ই মামুন । সারা জীবন তোমাকে দু’চোখ ভরে দেখব বলে, তোমার কাছাকাছি থাকব বলে আমার এতদূর আসা। মহান সৃষ্টিকতাকে হাজার শোকরিয়া তোমার কাছাকাছিতে আমি সবসময় ভালো ছিলাম। তুমি ভালো থেকো চামেলী । খুব ভালো ।------মামুন ।
যাঁর জন্য আমি তোমার কাছে টাকা পাঠাই, তিনি মামুনের মা । আশাকরি তুমি তোমার প্রশ্নের জবাব পেয়েছো ।চামেলি ফুফু’র অবিশ্বাস্য রকমের চিঠিটি পড়ে আমি নিশ্চুপ বসে রইলাম অনেকক্ষণ । হঠাৎ লক্ষ্য করলাম আমার চোখের কোল বেয়ে পানি পড়ছে ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন