বৃহস্পতিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১২

প্রতারক

আজকেও বাসা থেকে বের হতে দেরী করবে ছেলেটা, তারপর পড়ি মরি করি চোখে মুখে নাস্তা একটু দিয়েই দেবে দৌড়। ত্রিলয়, এই ত্রিলয়... বলতে নাস্তার প্লেট হাতে যেতে থাকেন ত্রিলয়ের রুমে। গিয়ে দেখেনত্রিলয় মনোযোগের সাথে পিসি চালাচ্ছে।

- এই তোর খাওয়া লাগবে না?
- রেখে যাও, খেয়ে নেব
- কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে?
- কয়টা?
- ১০টা ৩০ বাজে
- এই সেরেছে......... ­......

বলেই ছুটল রুমের বাইরে, ব্রাশ করে,গোসল করে নাকে মুখে নাস্তা একটু গুজে বেড়িয়ে গেল ত্রিলয়। ছেলেকে নিয়ে সবসময় ই দুশ্চিন্তায় থাকেন ত্রিলয়ের মা, ছেলেটা যেভাবে রাস্তায় চলা ফেরা করে কবে না যেন কি অঘটন করে বসে, একটা মাত্র ছেলে তার। তাই টেনশন টা আরও বেশি হওয়াইস্বাভাবিক।

ত্রিলয় একটু পাগল টাইপ হলেও ফাজলামির বেলায় একেবারে সেরা, টেকনোলোজির বিষয়ে সে নেশার থেকে বেশি আসক্ত, বাসায় যতক্ষণ ই থাকবেমিউজিকে ঘর কাপাবে, আর একটার পর গেমস এর লেভেল কমপ্লিট করবে, আজ প্রিন্স অফ পার্সিয়া, তো কাল মাস এফেক্ট না হয় এন.এফ.এস চলছে। ত্রিলয়ের মায়ের ভাষায়, খাওয়া ঘুম ছাড়া তার ছেলের মুখ পিসি ছাড়া কেউদেখতে পায় না।

রাস্তায় বের হয়েই মনে পড়লো রাস্তা তো কাটা, রাস্তা ঠিক করা হচ্ছে, রিকশা নিলেও ঘুর পথে যাবে তাতে আরও দেরী হবে বরং হেটে যাওয়াই ভালো। বাস স্টপে আসতেই দেখে বাস দাড়িয়ে আছে, দেখেই রাস্তা এদিক, ওদিক এক ঝলক দেখেই দৌড়ে পার হয়ে গেল। টিকেট কেটে বাসউঠবে, ভাড়া ঠিক ই ডাবল দিচ্ছে কিন্তু গেটে বাঁদর ঝোলা হয়ে যেতে পারবে কিনা তাও সন্দেহ !! তার উপর ক্লাসে আজ প্রোজেক্টর বিষয়ে কাজ আছে, আগেই যেতে পারলেই ভালো, তারউপর ঢাকা সিটির যা জ্যাম, লাগতে পারলে হয় একবার ছাড়ার নাম আর করে না।

বাসে উঠে দাঁড়িয়েছে, তার পাশে এক লোক, আর তার পাশে দুইটা মেয়ে। লোকটার পায়ে মেয়ে দুইটার একজন পাড়া দিল, লোকটা ককিয়ে উঠে, আপনি আমার পায়ে পাড়া দিলেন কেন? আর বলবেই না কেন একেবারে পেনসিল হিলের পাড়া :p মেয়েটা অতি শুদ্ধ ভাষায় বলে ওঠে

- “আশ্চর্য, আপনার পায়ে আমি পাড়া দেব কেন? আপনি কি আমার পরিচিত নাকি”

- ওমা, তাহলে কি পরিচিত দের পায়ে পাড়া দিয়ে বেড়ান?

- আপনি আমার সাথে পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করছেন কেন?

- পায়ে পাড়া দিলেন আমার, আবার বলছেন আমি আপনার পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করছি, বাহ ভালোই তো...
ত্রিলয় মিটি মিটি হাসছে, জনসংখ্যা বেশি হয়ে এই দেশে খারাপ হয় নি, এভাবে পাবিকের গুতা ঠাসা খেয়ে বাসে ঝুলে যাবার সাথে সাথে নির্মল বিনোদন ও পাওয়া যায়। মহিলা সিট খালি হতেই মেয়ে দুইটি সেখানে গিয়ে বসে, পাশের লোক চেপে দাঁড়ালে এবার সেও একটু বামে চেপে ভালো করেই দাড়ায়। কানে ইয়ার ফোনে এতক্ষণ পিটবুলের টোমা গানটা বাজছিল, গানের প্লে লিস্ট শেষ হওয়াতে পকেট থেকে মোবাইল বের করতে গিয়ে দেখে তার সামনে এক মেয়েবসে আছে... মেয়েটাকে দেখে তার ভালো লাগে... এবার সুন্দর মত মেয়েটার সিটের সাথে দাড়ায়, বাসের বাম পাশের সারির প্রথম সিটেই মেয়েটা বসে আছে, এতক্ষণ কেন সে দেখলো না সেই লজিক খোজা শুরু করেন, প্রোগ্রামার দের এই এক দোষ, কোড করার মত সবকিছুতেই লজিক খোজে। যাই হোক সে প্লে লিস্ট পাল্টে মেয়েটিকে দেখতে শুরু করে, দু’এক বার চোখা চুখি হয়ে গেল। মেয়েটা কাকে যেন মেসেজ করলো, মোবাইলের স্ক্রিন এক রকম ঢেকে মেসেজ করলো।
আবার ত্রিলয়ের লজিক খোজা শুরু, ত্রিলয়কে নিয়ে ওর ফ্রেন্ডরা প্রায়ই পচায়,বলে তোর যা স্বভাব তাতে তোর ল পড়া উচিৎ ছিল, কারন দর্শানো নোটিস দিতে পারতি, কি মনেকরে ত্রিলয় নিল কে মেসেজ দেয়, দোস্ত আমার তো এক মাইয়ারে পছন্দ হইছে, এঙ্গেজড কিনা বুজতাছি না, যামু? নিল হল ত্রিলয়ের সকল বদমাইশি আর অপকর্মের সাক্ষী। ওপাশ থেকে গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে রিপ্লাই আসে যা, আমি এদিক সামলে নিতেছি।

ব্যাস নেমে যায় মেয়ের পিছু মতিঝিল, মেয়েটা বোধ হয় এদিকের কোনকলেজে পড়ে, মেয়ের পিছু নেবে এমন সময় দেখে সেই মেয়ে দুইটাও এসে যোগদিয়েছে, বুঝতে আর বাকি নাই ঘটনা কি, তারা তিন বান্ধবী একসাথেই এসেছে। তা যাই হোক সে পিছু নেবেই, কিছুদূর যাবার পর ফোনে মেসেজ দেয় নিল, যেখানে খুশি যা ১২টার মধ্যে আসতেই হবে। এদিকে বাজে ১১.২০, তারানটরডেমের সামনে। এইদিকে ত্রিলয় যদি চলে যায়, মেয়েটার বিষয়
এখানেইসমাপ্তি, না গেলে ওদিকে প্রজেক্টা গোল্লায় যাবে, নিজেকে ঝাড়ি দিতে থাকে আজ সকালে নেটে না বসলেই হত। পরক্ষনেই ভিন্ন চিন্তাধুর নেটে না বসলে দেরী করে বের হতাম আর একেও দেখতে পারতাম। যাক দেরী করে ভালোই হল।

কি মনে করে মেয়েটাকে পিছন থেকে শুনছেন বলে চেচাতে সামনে চলে যায়।

- আমাদের বলছেন?
- হ্যাঁ
- বলুন
- আপনাকে না ওনাকে বলবো
- জি, আমাকে কি বলবেন বলেন, আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে
- আমারও দেরী হয়ে যাচ্ছে, এত আস্তেহাটেন কেন?
- বুঝলাম না, আপনি কি এটা বলতেই এসেছেন?
- এত শুদ্ধ ভাষা আমার ভালো লাগে না, আপনার ফোন নাম্বার দেন

বিস্ফোরিত চোখে সে বলতে শুরু করে...
- আমাকে দেখে কি পাবনা ফেরত মনে হয়?
- আমি কিভাবে বলবো ওখানে গিয়েছেন কিনা
- আপনি কোন সাহসে আমার নাম্বার চাইলেন?
- কেন আপনি কি বিশেষ কেউ নাকি, নাম্বার চাওয়া যাবে না?
- দেখুন, আপনাকে আমি চিনি না, আমার কথা বলবার ইচ্ছা নেই
- আপনাকেও আমি চিনি না, আপনার সাথেকথা বলবো তাই নাম্বার চাইছি

এমন সময় ফোনে আবার মেসেজ, তারতারিকর। ত্রিলয় ব্যাগ থেকে খাতা বের করে খচ খচ শব্দ করে নিজের নাম্বারলিখে মেয়েটিকে দেয়, বলতে শুরু করে,আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে, নামটাও জিজ্ঞেস করতে পারলাম না, এই নাম্বার কল দিয়েন, কথা আছে বলেই উলটো দিকে দৌড়।
ত্রিলয় যেতেই নিরার বান্ধবী জুথিআর সামিয়া হাসতে শুরু করে, এইটার সার্কিটে ডিস্টার্ব আছে, জুথির সাথে সামিয়া গলা মিলায়, তালুকদার স্যারের ভবিষ্যৎ বউ রাস্তায় পাগলের পাল্লায়। নিরাদের কলজের বয়সে সবচেয়ে প্রবীণ হলেন এই স্যার, আর ক্লাস পারফরম্যান্স ভালো থাকায় নিরাকে বেশ ভালোই জানেন। হাসি কথার ফাকে মনের ভুলে কাগজটা ফেলে না দিয়ে ব্যাগে রেখে দেয় নিরা।
part 2 coming

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন