বৃহস্পতিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১২

“এক সন্ধ্যায়” Part 01



তূর্ণর আজ খুব মেজাজ খারাপ। সে কারো সাথেই কথা বলছে না। বাবা স্কুল থেকে নিতে এসেছে, বাবার সাথে বাড়ি ফেরার পথেও রিক্সায় ও একটা কথাও বলেনি। বাবা অবশ্য দু’বার জিজ্ঞেস করেছে- কিরে ব্যাটা, মুখের ভেতর কি ভাপা পিঠা ঢু
কিয়ে রেখেছিস নাকি? কথা বলিস না কেনো? বাবাটা যে কি না? মুখের ভেতরে কি কখনও ভাপা পিঠা রেখে দেয়া যায়? যতই দিন যাচ্ছে বাবাটা ততই বোকা হয়ে যাচ্ছে।

বাসায় ফিরেই তূর্ণ চুপ করে সোফার উপর পা তুলে বসে পড়লো। লুব্ধ ছেলের গুরুগম্ভীর চেহারা দেখেই বুঝেছিলো কিছুতো একটা ঘটেছে স্কুলে, তাই সেও সোফায় তূর্ণর পাশে ওর মতো করেই পা তুলে বসে পড়লো।
তূর্ণ ডান হাতের তর্জনী আঙুল গালে দিয়ে গভীর চিন্তায় ব্যস্ত। লুব্ধও ছেলের দেখাদেখি গালে আঙুল দিয়ে ভাবতে লাগলো। তূর্ণ আড়চোখে বাবাকে দেখে গাল থেকে হাত সরালো।

- বাবা তুমি আমাকে নকল করছো কেনো? বাংলা মিস বলেছে নকল করা খুব অন্যায়।

- আচ্ছা যা আর নকল করবো না, কিন্তু তোর কি হয়েছে সেটা আগে বলতে হবে তো।

- আমার খুব রাগ হয়েছে বাবা।

- কার উপর বলেই দ্যাখ না, বাবা আচ্ছা করে বকুনি দিয়ে দেবে।

- ক্লাস থ্রীর নিত্য ভাইয়া আমাদের ক্লাস টু এর ব্ল্যাক বোর্ড এ লিখেছে তূর্ণ+ তূর্ণা, বাবা এটা কি কোন অংক হলো বলো? আমি কি কোন সংখ্যা যে যোগ করা যাবে?

- ও... তাহলে তোর রাগ হয়েছে নিত্যর উপরে?

- উহু...
-তাহলে কার উপর রে ব্যাটা?

- আমি যখন নিত্য ভাইয়াকে বলছিলামযে এভাবে তো যোগ হয় না, তখন তূর্ণাটা না খুব হাসছিলো। আমাকে বললো, তূর্ণ এভাবে যোগ করে লাভ হয়। লাভ মানে ভালবাসা, বলেই হি হি করে হাসতে লাগলো, আর ওর দেখাদেখি সব্বাই হাসতে শুরু করলো।

- লুব্ধ তার ছয় বছরের ছেলের কথা শুনে হেসে ফেললো।

- তূর্ণ চোখের চশমা ঠিক করতে করতে বললো, বাবা তুমি এরকম পঁচা করে হাসছো কেনো? এটা কি হাসির কথা?
- লুব্ধ অনেক কষ্টে হাসি চেপে বললো-হ্যাঁ তাইতো, এটা মোটেও হাসির কথা না, এই দ্যাখ, আমি আর হাসবো না, এই বলেই লুব্ধ আবারও হেসে ফেললো।
- বাবা তুমি খুব দুষ্টু হয়ে গেছো,বড়দের দুষ্টুমি করতে হয়না।
তূর্ণ হনহন করে হেঁটে ওর ঘরে চলে গেলো। ওকে এখন অনেক ভাবতে হবে, কিভাবে তূর্ণা নামের ক্লাস এর সবথেকে পাঁজি মেয়েটাকে শায়েস্তা করা যায়।
লুব্ধ অবাক হয়ে ভাবে, ছেলেটা কারমতো হয়েছে? ওর মাও তো ভীষণ চটপটেছিলো।
তৃণা দেখেছো, তোমার ছেলে ঠিক তুমিযেমন চেয়েছিলে তেমনি হয়েছে। তুমি বলতে না, “আমার ছেলেকে আমি আইনস্টাইন বানাবো, আমার ছেলে অকারনে কথা বলবে না, শুধুই ভাববে আর ভাববে।” হ্যাঁ, তোমার ছেলে পিচ্চি আইনস্টাইন হয়েছে। কেনো চলে গেলে তৃণা? তোমার পিচ্চি আইনস্টাইন কে দেখেও গেলেনা একবারের জন্য। ওই যে উপরে একজন বসে আছেন, তার সাথে কি তোমার চুক্তি হয়েছিলো, তূর্ণ চোখ খুললেই তোমার চোখের পাতা বন্ধ করতে হবে? তাই যদি হয় তবে উনি আমার সাথে কোন চুক্তি করলেন না কেনো? তুমি সবার সাথে সাথে কি উনারও খুব পছন্দের ছিলে? লুব্ধর চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। তৃণা বেঁচে থাকতে ও বারবার তৃণার কাছে অভিযোগ করতো, জীবনটা এত ছোট কেনো? অথচ তখনকার মনে হওয়া সেই ছোট জীবনটা আজ লুব্ধর গলায় আটকে যাওয়া কাঁটার মতো মনে হয়, যেই কাঁটা গলায় নিয়ে প্রতিটা মুহূর্ত গিলতে হয় ওকে। তূর্ণ না থাকলে কবেই চলে যেত ও তৃণার কাছে, ওর তৃণা যে একা থাকতে ভীষণ ভয় পায়। লুব্ধর মাঝে মাঝে মনে প্রশ্ন জাগে, ওর ছেলেটা মায়ের ভালবাসা না পেয়েই এমন সবার থেকে আলাদা হয়ে যায়নি তো?
- বাবা খাবে না? আমার ক্ষুধা পেয়েছে।
- লুব্ধ চোখ মুছে হেসে উত্তর দেয়,হ্যাঁ আমারও ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে। চল, তোকে আমি আজ নিজ হাতে খাইয়ে দেবো।
- বাবা ছোট বাচ্চাদের খাইয়ে দিতেহয়, আমি তো অনেক বড় হয়ে গেছি।
- হুম...ঠিক আছে তাহলে তুই আমাকে খাইয়ে দিস।
- তুমি রান্না করবে কখন? এত কথা বলে সময় নষ্ট করো কেনো? আজ তো বুয়া আসেনি।
- বলিস কি রে? চল, দেখি কি রান্না করা যায়।
তূর্ণ চুলোর পাশে টেবিলের ফাঁকা জায়গায় বসে আছে আর লুব্ধ ডিম ভাঁজি করার চেষ্টা করছে।

- এইবার দ্যাখ, বাবা কিরকম ডিম ভাঁজি করে, এরথেকে ভালো ডিম ভাঁজিপৃথিবীর কেউ করতে পারবে না, তোর বাবা তো সবার বড় মাস্টার শেফ্ বুঝলি? ডিম যখন তেলে দেয়া হলো তখন তো লুব্ধ খুব খুশি নিজের কৃতিত্বে কিন্তু ডিম উল্টাতে গিয়ে ওর হাসি মিইয়ে গেলো কারন কড়াই মশাই ডিমটাকে নিজের সম্পত্তি মনে করে জোর করে ধরে রেখেছে।
- লুব্ধ ছেলের দিকে তাকিয়ে ভ্যাবলা মার্কা হাসি দিয়ে বললো- এটাই তো এই ডিম ভাঁজির বৈশিষ্ট্য,টুকরো টুকরো হয়ে থাকবে, কখনও খেয়েছিস এমনটা?
- তূর্ণ তার স্বভাব মতো কথা না বলেচশমাটা নাকের কাছ থেকে উপরে তুলে দিলো।
খেতে বসে লুব্ধ ছেলেকে জিজ্ঞেস করলো কেমন হয়েছে ব্যাটা? তূর্ণ চুপচাপ খেতে থাকলো।
- কিরে বলনা কেমন হয়েছে খেতে?
- বাবা এত খারাপ ডিম ভাঁজি আমি কখনও খাইনি।
- লুব্ধ আবারও ওর বিখ্যাত ভ্যাবলামার্কা হাসি দিয়ে বলে, এভাবে বলছিস কেনো? খারাপ হলেও মানুষকে খুশি করার জন্য ভালো বলতে হয়।
- মিথ্যা বলা মহাপাপ বুঝেছো বাবা?বাংলা মিস বলেছে কষ্ট পেলেও সত্যি কথা বলতে হয়।
- সবসময় এত বাংলা মিস বাংলা মিস করিস কেন? তোর বাংলা মিস কি সবজান্তি শমসেরনি নাকি?
- বাবা সবজান্তি শমসেরনি নয়, সবজান্তা শমসের। আর হ্যাঁ বাংলা মিস সব জানে।
- ঠিক আছে আমার আব্বা মানলাম বাংলা মিস সব জানে।
- বাবা আমি তোমার আব্বা কিভাবে হবো? তুমি এত বোকা কেন বাবা?
- ওরে...... আচ্ছা যা, আমি তোর আব্বা। এবার ঠিক আছে?
- হুম।
Next Part

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন