রবিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১২

==ভালবাসা এবং প্রতিজ্ঞা==

==ভালবাসা এবং প্রতিজ্ঞা==
শুনেছি প্রেমে পড়লে মানুষ গরু, ছাগল, গাধা, ভেড়া আরো কত্ত কি হয়! তবে আমি কিন্তু এগুলোর একটিও হইনি। কারণ, আমি তো এখনো প্রেমেই পড়িনি! তো প্রেমে না পরার পেছনে বড়-সড় তেমন কোনো কারণ না থাকলেও ছোটখাটো ১টা কারণ অবশ্যই আছে। আর তা হলো আমি এবং আমার এক বন্ধু দুজনে মিলে একটা যৌথ প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে, জীবনে যত কিছুই করি না কেন আমরা কখনো প্রেম করব না। বন্ধুটি অবশ
্য একজনের কাছ থেকে বিশাল টাইপের এক ছ্যাঁকা খেয়ে এরূপ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আর আমি…? তেমন কিছুই না। আসলে বন্ধুর মুখ থেকে ভালোবাসার বিরুদ্ধে ভারী ভারী সব ডায়লগ শুনতে শুনতে এত্ত কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিলাম! অবশ্য আমি কিন্তু আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারিনি। কারণ, আমি আবার দুই কথার লোক! অর্থ্যাৎ, সকালে এক কথা বললে বিকেলে আরেক কথা বলে ছাড়ি! বিশেষ করে আমি যা বলি তা না করতেই বেশি আনন্দ পাই! তো প্রতিজ্ঞা ভঙ্গের প্রধান কারণই ছিল প্রেম। একদিন কোত্থেকে যেন প্রেম নামক এই বস্তুটা উড়ে এসে ধপাস করে আমার মনে বাসা বাঁধল। হঠাৎ করেই আমার ক্লাশে পড়ুয়া এক মেয়েকে আমার ভালো লাগতে শুরু করল। আর এই ভালো লাগাই যে ভালোবাসা তা আজকাল ফিডার খাওয়া শিশুরাও জানে। তো যাই হোক, মাত্র কয়েক দিনের পরিচয়েই আমি মেয়েটার প্রেমে একেবারে দিওয়ানা হয়ে গেলাম। আমি রীতিমত তার প্রেমের স্যুইমংপুলে ডুবে ডুবে জল খাওয়া আরম্ভ করে দিলাম! এখন দিন-রাত ২৪ ঘন্টা আমার মনটা সিলিংফ্যানের মত তার পেছনে ঘুরঘুর করতে লাগল। আমার ধারনা মেয়েটাও আমার প্রেমের সাগরে গড়াগড়ি দিতে শুরু করেছে। কারণ, তার আচার-আচরণ আর ভাষা-ব্যাকরণে আমি এমনটাই যে আভাস পাচ্ছিলাম! এমন পরিস্থিতিতে আমার জয়গায় এখানে অন্য কেউ হলে হয়তো তার ভালোবাসার মানুষের জন্য এতদিনে নতুন কোনো গান আবিষ্কার করে ফেলতেন। আমিও গান গাইতে চেয়েছিলাম কিন্তু গলার যে বেহাল দশা তাতে করে এত্ত বড় রিস্ক নেওয়ার সাহস পাইনি! যাই হোক, এতটা দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও আমি তাকে আমার মনের কথাটা খুলে বলতে পারিনি। আর যেহেতু মেয়েরা ‘বুক ফাটে তবুও মুখ ফোটে না’ নীতিতে বিশ্বাসী তাই ওর কাছ থেকে আগে অফার পাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তো এভাবে আর কত? ভাবলাম মুখে না হোক অন্তত চিঠি লিখে হলেও তাকে আমার মনের কথাটা জানানো উচিত। যেই ভাবা সেই কাজ। তবে চিঠিটা লিখতে একটু লেট হয়ে গিয়েছিল। কারণ, আমি চিঠি লেখার আগেই একদিন রাতে সে আমাকে ফোন করল। (এ যেন মেঘ না চাইতেই শিলা, বৃষ্টি, বজ্রপাত আরো কত্ত কি!) সে বলল, ‘সুমন তোমার সাথে আমার জরুরি কথা আছে’। আমি বললাম, ‘কি কথা বলো’? সে বলল, ‘মোবাইলে বলতে পারব না। সামনা- সামনি বলতে হবে। তুমি কাল সকালে আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবে’? জবাবে আমি কি আর না বলতে পারি! বললাম পারব। তারপর স্পটের নাম বলেই সে ফোন রেখে দিলো। সেদিন তার কথা ভাবতে ভাবতেই আমি সারাটা রাত পার করে দিলাম। দুই. সকাল সাতটা বাজে। আমি জীবনেও এত সকালে ঘুম থেকে উঠি নাই! তবে আজ উঠেছি শুধুমাত্র তার সাথে দেখা করার জন্য। ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ হয়ে সেজে- গুজে তার সাথে দেখা করার জন্য রওনা দিলাম। পথে এক ফুলওয়ালার কাছ থেকে অনেক রিকোয়েস্ট করে ৫ টাকার ১টা আধমরা গোলাপ ৩ টাকায় কিনতে সক্ষম হলাম। (আফ্টার অল প্রেম-ভালোবাসার বিষয় ফুল ছাড়া খুব একটা জমে না কিনা!) এরপর ফুলটা প্যান্টের পকেটে রেখে তার সমনে উপস্থিত হলাম। ভাবলাম সে যখনই ‘আই লাভ ইউ’ বলবে তখনই ফুলটা বের করে তাকে দিব। আর এই উদ্দেশ্যে আগেই নিজের ডান হাতটা পকেট বরাবর রেডি করে রাখলাম। কিন্তু আফসোস্! সে আমাকে ভালোবাসার কথা বলার জন্য এখানে ডাকেনি। ডেকেছে আমার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার চাওয়ার জন্য! মোবাইলে টাকা ধার চাইলে হয়ত আমি নানান বাহানা তৈরি করে ফেলতাম, এটা ভেবেই মনে হয় সে মোবাইলে টাকা ধার না চেয়ে এভাবে সরাসরি আমাকে এমন বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র করেছে। উপায় না দেখে অবশেষে প্রেস্টিজ পাংচারের ভয়ে পকেট থেকে ৫০০ টাকার ১টা কড়কড়ে নোট বের করে ওর হাতে দিলাম। টাকা হাতে নিয়ে সে বলল, ‘তুমি রাগ করনি তো’? তখন বুক ভরা হাহাকার থাকা সত্ত্বেও ঠোঁট দুটি কিঞ্চিত বাঁকা করে মুখে হাসির ভাব ফুটিয়ে বললাম, ‘আরে না রাগ করব কেন’? ‘আরো লাগলে তুমি আমাকে বলো’ এটাও বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু যদি সত্যি চেয়ে বসে এই ভয়ে কথাটা আর মুখ থেকে বের করিনি! সেই দিনটি ছিল ১৩ই ফেব্রুয়ারি। ভাবলাম পরেরদিন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এদিন মানুষ তার ভালোবাসার মানুষের জন্য কত কিছুই তো করে। আর আমি না হয় আজ আমার ভালেবাসার মানুষের জন্য এই ৫০০ টাকাই বিসর্জন দিলাম। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ইতিমধ্যেই সে আমার কাছ থেকে বিদায় নিলো। সাথে নিয়ে গেল আমার দেওয়া ৫০০ টাকা কড়কড়ে নোটটি! অন্যদিকে আমার পকেটে রয়ে গেল আধমরা সেই লাল গোলাপটি। সে যতক্ষনে গেল, ততক্ষনে আমার এই আধমরা গোলাপটি পুরোই মৃত ঘোষিত হলো! ইন্নালিল্লাহে… রাজেউন!! তিন. আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি। অর্থাৎ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। হঠাৎ করেই প্রিয়ার (ভালোবাসার মানুষ) সাথে আমার দেখা হয়ে গেল। দেখা হতেই সে নিজ থেকে গতকালের টাকা ধার দেওয়ার জন্য আমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাল আর বলল, কেন টাকা ধার নিয়েছিলাম তা জনতে চাইলে না? যদিও আগ্রহ নেই তবুও বললাম, কেন নিয়েছ? বলল, আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে একটা ফতুয়া গিফট করার জন্যই টাকাটা ধার নিয়েছিলাম! কথাটা শোনা মাত্রই যেন মনে মনে খুশিতে লাফ দিয়ে আমি মাটি থেকে প্রায় ২ ফুট উপরে উঠে গেলাম! (আমি আবার লাফা-লাফিতে প্রচন্ড রকমের দুর্বল। যদি সবল হতাম তাহলে এতদিনে অলিম্পিক গেমসে নাম লিখিয়ে বাংলাদেশের জন্য কয়েকটা সোনার মেডেল আনার ব্যবস্থা করে ফেলতাম না!) যেহেতু আমার ধরণা ছিল যে, প্রিয়ার ভালোবাসার মানুষ একমাত্র আমিই। তাই এতটা খুশি হয়েছিলম আর কি! অতঃপর বললাম, তা ফতুয়া কি কেনা হয়েছে? সে বলল, অবশ্যই এবং সেটি তাকে দিয়েই তো বাসায় ফিরছি। এবার আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম, তাকে… মানে কাকে? জবাবে সে বলল, তোমার বন্ধু আরিফ! এই কথা শুনে আমি অবাক হবো না কি হবো এটা বুঝে ওঠার আগেই প্রিয়া বলল, আরিফ আজ বিকেলে আমাকে চাইনিজ খাওয়াবে। তুমি কি আমাদের সাথে যেতে পারবে? মুখে বললাম, না কাজ আছে। আর মনে মনে বললাম, শালা ভাবলাম কি আর হইলো কি? ব্যাটা নিজেই নিজের প্রতিজ্ঞা ভেঙে বসে আছে! এখন তোদের সাথে চাইনিজে গিয়ে আমার কোনো লাভ নেই। শেষে যদি দুজনে আবেগের বসে আমাকেই খাওয়ার বিল দিতে অনুরোধ করে তবে আমি চোখে সর্ষে, সূর্যমুখী ছাড়াও আরো কত্ত যে বাহারি রকমের ফুল দেখব তার কোনো ইয়াত্তা নেই! ভালোবাসা পাইনি তো কি হয়েছে ভবিষ্যতে পাবো; কিন্তু টাকা খরচ হলে তা আর পাওয়া যাবে না! সেদিন এত্ত বড় একটা শক্ খাওয়ার পরও আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েনি। তবে নিজের মাথায় অন্যের কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার হালকা আভাস যে পাইনি তা কিন্তু নয়। সাথে পেয়েছিলাম হৃদয় পোঁড়ানোর কিঞ্চিত দুর্গন্ধ! এ ঘটনার পর আমি মনে মনে শুধু এতটুকুই চেয়েছি, প্রিয়া যেন আমার পাওনা টাকা সময়মত শোধ করে দেয়। নয়তো আমি আম আর ছালা তো বটেই সাথে বড়া আর খোসাও হারাবো! অতঃপর আমি আবার আমার সেই চিরচেনা প্রতিজ্ঞা করলাম যে, জীবনে যত কিছুই করি না কেন আর কখনো প্রেমের পথে পা বাড়াবো না। তবে এবারো আমি আমার এই প্রতিজ্ঞায় পুরোপুরি অটল থাকতে পারব কিনা এ ব্যপারে কোন গ্যারেন্টি নেই। কারণ, চোখ যেহেতু আছে সেহেতু আবারো যেকোনো সময় যে কাউকে ভালো লাগতেই পারে! পাঠক, আপনারা কি বলেন?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন